সাম্প্রতিক বেদনাসমূহ (মে-জুলাই)

আমার যে স্টেশন নাই

এত যে পথ, ধূলোঝড়
সারি বেধে কোথায় যাচ্ছে মানুষ ?
জিজ্ঞেস করে দেখ, কেউ জানে না।
আমিও বুঝি না এ ছুটোছুটির মানে
অর্থহীণ দৌড়ঝাঁপে ভুলে গেছি হৃদয়ের পথরেখা।

ভাগ্যিস, আমার কোন পিছুটান নাই;
তবু মাঝে মধ্যে দীর্ঘশ্বাস জাগে, মনে হয়--
ট্রাভলার, তুমি কতো লাকি,
আম‍ার যে স্টেশন নাই কোনো!

পান্থপথ
২২ শ্রাবণ, সন্ধ্যা ৮:২৭

পানিরা হয়তো সমকামী

পানির নামের পাশে সঙ্গোপনে শুয়ে থাকে সাঁতারু শুশুক। সাঁতার প্রতিযোগিতার শুরু মূলত জন্মের আগে থেকেই। তবু ডলফিনেদের কাছে পরাজিত হয় বাইচের নৌকা। পানিরাও কি তবে পক্ষপাত জানে-- যাকে জরায়ুতে দেয় চ্যাম্পিয়ান ট্রফি, জীবন সাঁতারে সে শেষ রানার আপ!
রাগ-ক্ষোভ-অভিমান ব্যতিরেকে পানিকে তাই বলা যায় সমকামী। সমুদ্র কিংবা মেঘে-- এই আকাশ পাতালে বিপরীত লিঙ্গ খোঁজেনি সে! প্রেম কাম জুড়ে তাই এ অক্সিহাই কন্যারা, একা। অসম বয়সী হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের মিলনে যার জন্ম-- সে কারে এগিয়ে দেবে তার রূপালী শরীর? ইদানিং কিছু বোতল তারে আটকে রাখে নিজের ভেতরে, এরে কি প্রেম বলা যায়? বরফের পাহাড় হিমালয় কি জানে, কে তার অগ্নি প্রেমিক? তবে চোখের জলকে সমকামী বলতে আমি নারাজ।

২৯ জুলাই, রাত ৩:০০
জসীম উদদীন রোড, উত্তর কমলাপুর


বোকা পাহারাদার

ব্যক্তিগত পাহাড় পাহারা দিতে গেলে
অন্যের অরণ্য একা হয়ে পড়ে।
তবু বুক পকেটে নিয়ে দীর্ঘ দাবানল
বসে থাকি সমুদ্রতটে, ছোঁয়া হয় না জল।
ও বালু, তুমি তো জানো-- আমার হৃদয়ে নেই ছল
তালুর মানচিত্রে নেই প্রেমনগরের গোপন পথের রেখা,
তবে কেন ফিরে ফিরে যাই আংটি গিলে ফেলা মাছের কাছে!

কৃষ্ণকালো পাথর আর নীলাভ জলের থেকে
সবুজ ঘাসেরা অনেক আদুরে,
বোকা পাহারাদারের জন্য কেন অপেক্ষা করে থাকবে পাহাড়িনী, বলো!

২৯ জুলাই, রাত ২:০০
জসীম উদদীন রোড, উত্তর কমলাপুর

বুলডোজার গো

বুলডোজার কি জানে, সংসারের মানে?
সেতো কেবল ভাঙে!
সুন্দরী হরিণীও বোঝেনা লিয়ানো লতার বাসর।

কেউ খাদ্যে--
আবার কেউবা পদ্যের ভাঁজে মুখ গুঁজে
ডুব সাঁতারে শুকে নেয় নীল সাগরের ঘ্রাণ;

কেউবা স্বাধীনতার জন্য
মুকুট ছুঁড়ে ঠাঁই নেয়
অশ্বত্থ বৃক্ষের তলে।

লোকালয়ে অনেকেই জানে না এখনও
কখনও ভাঙনও হয়
নির্মাণ সম্ভবা।

কৃতজ্ঞচিত্তে তাই বলি--
বুলডোজার গো
তুমি আমার কলি যুগের
ভগবান গো!

২৬ জুলাই, রাত ১২:০৯
জসীম উদদীন সড়ক, উত্তর কমলাপুর

একদা অভিমানী উড়ালসড়ক

একদা এক উড়ালসড়ক 
একটি খোলাচুলের বিলবোর্ডের প্রেমে পড়লো।
উড়ালসড়ক বেয়ে সারি সারি গাড়িরা, 
গাড়ির ভেতর শাড়িঢাকা নারীরা
কেউ দেখলো না সেই অস্পর্শী মায়াবী প্রণয়।

গভীর রাতে বিলবোর্ডে আলো ফেলে করপোরেট বাতি--
উড়ালসড়ক জেগে থাকে, জেগে জেগে চেয়ে থাকে সারাটা রাত।
একদিন নারিকেল তেলে সয়লাব হলে দেশ,
তৈলবণিকেরা খুলে নেয় রূপসী বিলবোর্ড;
একা হয়ে যায় যেন নিশাচর উড়ালসড়ক।

এরপর দিন যায় রাত যায়, অভিমানে মরে যায় উড়ালসড়ক
একদিন শহরের শেয়ালমুখো মানুষেরে ঘৃণা করে
হুড়মুড় করে ধ্বসে পড়ে সে--
আত্মহননকেই জেনে মোহন প্রতিশোধ।

বনানী, ২৮ মে ২০১৩ রাত ৯:৫৩

সবুজ পাতায় পাতা রোদের ডিনার

পাখি জানে না, 
জানে না অরণ্যের রূপসী হরিণী,
ঘন বন জানেনি, জানেনি সরিসৃপও
ন্যাশনাল জিওগ্রাফি তাকে বিক্রি করে দিচ্ছে প্রতি মুহুর্তে।
বাণিজ্য নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই, 
কারও লিভিং রুমেও সে চায় নাকো যেতে;
তার শুধু আছে গান ডালের আড়ালে, 
আর সবুজ পাতায় পাতা রোদের ডিনারে।


পান্থপথ ২৯ মে ২০১৩ সকাল ১১:১০

মন্তব্যসমূহ