মুখচ্ছবির পুস্তিকায় পঙক্তিসকলি


তোমার গোলাপী অপেক্ষায়

চূড়ান্ত নগ্ন হৃদয়ে তোমার কাছে গেলেও
তুমি দেখতে পাওনা হৃদয়ের রঙ শাদা নাকি লাল,
তুমি শুধু দেখেছ আমার সবুজ পিরান খানি-
অথচ চোখ বন্ধ করেই আমি দেখেছি
কী সবুজ অবুঝ একটা গোলাপী হৃদয় নিয়ে
তুমি এখনও অপেক্ষা করে থাকো
কোনও এক অচেনা রাজকুমারের - আমার থাকা বা না থাকায়...

আত্মায় রক্তপাত

রক্ত চাও রক্ত?
গাজা কিংবা প্যালেস্টাইন
ইরাক কিংবা লিবিয়া
বাধন কিংবা রেডক্রস
সবার জন্য শরীরের ব্যাগে জমিয়ে রেখেছি রক্ত-
আমার আত্মায় যে রক্তক্ষরণ
সিরিন্সে কি বের করা যাবে তাকে!

হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ, ব্লাডব্যাংক কি পারে পুষিয়ে দিতে এর অপূরণের দায়!

হৃদয় হোক ভোকাট্টা ঘুড়ি

শাদা মনে কাদা লাগলে বিরক্ত হওয়া যাবে না
কাদা ধুয়ে ফেলা যায় - মনের কাদায় মনোযোগ দেয়ার চেয়ে
মনোযোগ দেয়া ভাল নিজেতে।

পথের পাথরে আটকে গেলে হৃদয়,
বড্ড বিঘ্ন ঘটবে ইহকামে, ব্লক তৈরি হবে, হৃদয়কে পরাতে হবে যান্ত্রিক আংটি,
স্বদেশী সে কাঁটা তুলতে যেতে হবে কোলকাতা-থাইল্যন্ড কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে।

আত্মা হোক এক ভোকাট্টা ঘুড়ি
উড়াউড়ি ব্যতিরেকে আর যেন তার থাকেনা কোন
বিশেষ কেপিআই, কর্তব্য ইত্যাদি ইত্যাদি...

জানেনা হৃদয় তার কি হবে উপায়

কিংকর্তব্যবিমূঢ় হৃদয় নিয়ে আমি কী করিবএক হাতে পোড়া বাশের বাঁশি
অন্যহাতে বেজে ওঠে ওয়েস্টার্ন রিংটোন
এ ডাক কি আমি মিস হতে দেব, নাকি ধরিব!

দূর্বোধ্য এ জীবন নিয়ে আমি করিব
একপাশে তার শূন্য মরুভূমি
অন্যপাশে হাত নাড়ছে সবুজ বনভূমি
আমি কোন প্রান্তে ধ্যানের মন্দির গড়িব!

সীমাবদ্ধ এ কাম-ক্ষুধাময় শরীর নিয়া কেমনে মরিব
এক জীবনে সুবিশাল শূণ্যতা
মৃত্যুতে সে পাহাড় হয়ে যায় মলিন, আরও ধূসর
মৃত্যুর প্রতীক্ষায় এ জীবনে আর কতবার ফুল হয়ে ঝরিব!

ভালোবাসা

ভালোবাসা বন্ধু সহজ কথা নয়
নয় বাহারি আলোয় দেখা পাহাড়ি ফুলের ছবি-
ভালোবাসা যেন খুন হয়ে যাওয়া নিজেই নিজের হাতে

রাধার আগুনে বাধা পড়ে থাকে দেহ
যমুনা সেচেও নেভে না মনের আগুন-
কমদামী হাটে প্রিয়ার হাসিতে বিক্রি হয়ে যাওয়া

মনভোলানো গোলাপী হাওয়াই মিঠায়
আনমনে তাতে সেজদা ঠুকেছে হৃদয়
গোলাপের বনে কবর নিয়েছি আঁধারের ইশারাতে

ফুরিয়ে এল দিন, মায়ের ক্যাফেটেরিয়ায়

আবার ঢাকায়, জ্যামে-চাকায়,
নির্মমতায়, কূট বেদনায়,
মুছিয়ে দেবার মানুষবিহীন- শহরটা হায় ডাকছে আমায়।

ভুল করলে কান মলা নয়
ভুল করলে নিজের দাঁতে
জিবটা নিজের কাটবে তাতে...
সেই শহরে যাচ্ছি ফিরে শুক্রবারে।

নোনতা সহজ শহরটারে
লকেটে বা কণ্ঠহারে,
ঝুলিয়ে রাখি প্রেমের মতোন
খুব মমতায় খুব আদরে;

খুলতে মানা শহরটারে
না-না মানা খুলনারে
রূপসা নদীর জল বয়ে যায়
গল্লামারি ভুলনারে।

আমার শহর ঢাকনা দেয়া
শাপলা কিংবা দোয়েল আঁকা
কাম অকামের চত্তরেতে
কোন বেলাই যায় না ফাঁকা।

খুব সকালে ঘুম ভাঙে থায়
পরিপাটি অফিস বাড়ি
স্মৃতিময়-এ খুলনা আমার
মিস করি প্রায় বিকেল বেলা...

এই ঈদে বড্ড খেলোয়ার হতে ইচ্ছে করছে

এই ঈদে শাড়ির মডেলদের দেখে বড্ড খেলোয়ার হতে ইচ্ছে করছে,
হকি কিংবা ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা বেজবল নয়
এক্কেবারে পেশাদার খেলোয়ার, কবি সৈয়দ শামসুল হকের খেলারাম...

ভাত কিংবা ভুতের জন্য নয়, যশ কিংবা খ্যাতির জন্য নয়,
বড্ড নিজের জন্য, আত্মার ও হৃদয়ের জন্য।

চোখ এবং ঠোটের, দাঁত এবং হাতের জন্য
বিশেষত আমার একান্ত অনুভূতির জন্য
আমার বড্ড খেলোয়ার হতে ইচ্ছে করেছে।

সাকিবের মতো বলকে মাঠছাড়া করবার জন্য
কিংবা মাশরাফির মতো স্ট্যম্প ধ্বংসের জন্য নয়,
কিছুটা শিশিরবিন্দুসম ঘামের জন্য,
ফুসফুসকে বড় বড় শ্বাস উপহার দেবার জন্য,
নরম হাতের স্পর্শের জন্য...

এই ঈদে আমি একবার খেলোয়ার হবো,
কোন এক সহৃদয় ফ্যাশন হাউজের সৌজন্যে।

আজাদ, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়
(হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোকের পঙক্তিমালা)

আজাদ, তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়,
আমার মাথা নিচু হয়ে আসে, যখন শুনি তোমার মৃত্যুতে উল্লাস করে
একদল হায়েনা, যারা কিনা নিজের মাবোনকন্যাকে গণিমত সাব্যস্ত করে।

আজাদ, তোমার মৃত্যু আমাকে দুর্বল করে দেয়,
আমার হৃদয় সীমিত হয়ে আসে, যখন শ্যামল বাঙলার কবি মিউনিখে
শরীর ছড়িয়ে পড়ে থাকে ঘাতকের বিষের অনলে, আমি শ্বাস নিতে ভুলে যাই।

আজাদ, তোমার বাণী আমাকে অপরাধী করে দেয়,
নিজের কাছে নিজেই হয়ে উঠি ফুলস্টপের মতো ক্ষুদ্র;
তোমাকে ধরে রাখার অযোগ্য এ জাতিকে তুমি ভালবেসেছিলে দোয়েলের মতো...

আজাদ- তোমার মৃত্যু সত্যিই আমাকে অপরাধী করে দেয়।
নিজেকে মৃত ঘোষনা করেছিলাম তোমার রক্তাক্ত ছবির পাশে দাঁড়িয়ে,
আজও আমি মৃতই রয়ে গেলাম, তোমাকে স্মরণ করে।

মতিঝিলে বৃষ্টি হচ্ছে

ভিজে যাচ্ছে শাপলাটা
ধুলোরা মৃত‌্যুযন্ত্রনায় ছটফট করে ঢুকে যাচ্ছে যেখানে পারছে,
বাকীরা প্রাণ হারাচ্ছে জৈষ্ঠের মেঘে
হাটফেরত চাকুরেরা এবার একটু স্বস্থিতে ঘুমুবে হয়ত
হয়ত শুক্রবারের পবিত্র উছিলায় সঙ্গমে যাবে কেউ কেউ
কেউ কেউ ইহতেকাফে...
আমি যাব আমার রুটির কাছে, আমার নতুন স্বপ্নের ডটকমে...

নক্ষত্রের উঠোনে পোড়ে বারবিকিউ রাত

বড় হয়ে উঠলে রাত প্রেম যেন ছোট হয়ে আসে
নৈশপ্রহরী আকাশ পাহারা দেবে এমনতো কথা ছিলো না
সেইসব না থাকা কথারাই হয়ে ওঠে কালের পাথর
বুক জুড়ে পুড়ে পুড়ে হয়ে ওঠে বার্বিকিউ রাত
নক্ষত্রের উঠোনে যেন সেই প্রভাত ঋষি
প্রভাতের আশা নিয়ে রাত্রির আরাধনা করে - আর
ব্যবহৃত জং পড়া ছাতার শিকগুলো খাঁচা হয়ে ধরে রাখে তারে আগুনের পরে
ঋষি যেন ঝলসে যাওয়া অভাগা চিকেন, শেষ রাতেও ন্যাপকিনের চাদরে ঘুমিয়ে পড়ে অবহেলে

জংধরা চোখের রমনীটা জানেনি, কোনো এক সময়ের শুরু যেন ঋষিদের মুক্তির সেলাই খুলে দেয়।

মন্তব্যসমূহ