ব্যক্তিগত কথামালা

বাজারজাত হয়ে গেছি

বাজারজাত হয়ে গেছি
হৃদয়ে লেগে গেছে কোম্পানির ট্যাগ
আমি এখন মাল্টিন্যাশনাল ব্যাগ।

কর্পোরেশন রেশন দিচ্ছে
মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিচ্ছে কাঁপা কাঁপা বুকে
নিতম্বের মাঝখানে এঁকে দিচ্ছে সুদৃশ্য লোগো-
ওগো, কর্পোরেশন
আমার আত্মার ভাতার
আমাকে রক্তাক্ত ক’রে সারাটা মাস
অর্থহীন রঙীন কাগজ গুঁজে দিচ্ছো 
ক’রে দিচ্ছো রমনার সস্তা রমণী।


মন পুড়লে কয়লা পাওয়া যায় না

পেট্রোল পোড়া ঘ্রাণ সারাটা আকাশ জুড়ে
আকাশে আগুন দিতে চেয়েছিলো কে
কার সাথে সংঘাত হলো মেঘের!

মন কষাকষি হলে ঘরে আগুন দিতে নেই
ঘর পুড়লে দেহ পুড়ে যায়, পুড়ে যায় মন
মন পুড়লে কয়লা পাওয়া যায় না
মেডিকেলের বার্ন ইউনিট জানে
কয়লা ও জ্বালানী অধিদপ্তর কখনো জ্বলে না

জ্বলন্ত মোমবাতির বুকে থাকে
পৃথিবীর হৃদপিণ্ড পোড়াবার সম্ভাবনা।

আকাশে হামাগুড়ি দিচ্ছো হে

মিষ্টি মিষ্টি ঘুমের ঘোরে
ঈসরাফিল বাজায় বিরক্তিকর শঙ্খ
যেন সে মৎসকুমার
পাখাঅলা ডলফিনের পিঠে চড়ে ঘুরছে আকাশ
তার হাতে যেন কৃষ্ণের বাঁশি
অযথাই যেন কার সাথে মিছে
    ভালোবাসাবাসি

আকাশে হামাগুড়ি দিচ্ছো হে বাতাসে বাজিয়ে মাদল
সামন্য বেদনা নিয়ে করছো অযথাই হইচই
মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে কি লাভ এই মধ্য শ্রাবণে?

শখের বশে বিক্রি হয়ে গেছি

শখের বসে বিক্রি হয়ে গেছি
সৌখিন জীবনের কাছে এ আমার
ছোট্ট অপরাধ।

ধার করা রঙে কেউ কেউ পৃথিবী রাঙায়
আমার পৃথিবী শাদা-কালো

অনুরোধে ঢেঁকি গিলেছে ঢাকাই রমণী
কমনীয় বৃষ্টিপাতে আকাশের মত পরিষ্কার থাক।

পেট্রোলের ঘ্রাণের মতো তোমাকে

বহুদিন পর যে সুরগুলো উঁকি দেয়
তার কথাগুলো কিছুতেই মনে আসে না
প্রেমিকাকে কীভাবে আদর করতে হয়
তা কি ভুলে যায় কোনো তুখোড় সাঁতারু?
মাতাল যুবরাজ ঘাস কাটছে না খাচ্ছে
তার খবর কি পাওয়া যায় খবরের কোল্ড স্টোরে?

এমন হাজার হাজার বোকা বোকা প্রশ্ন
সুড়সুড়ি কাটছে বাট মনে পড়ছে না কিছুই

শুধু মনে হয়
পেট্রোল পোড়া ঘ্রাণের মতো তোমাকে
ভালো বাসতে বাসতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

নিজেকে কৃষ্ণ ভেবে

স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভেঙে গেছে চোখ
হাউমাউ ক’রে রক্ত বেরুচ্ছে জীবন থেকে
অপরাজিতাগুলো বর্ণনাতীত কালো হয়ে যাচ্ছে
চুম্বনের লাল দাগগুলো মুছে যাচ্ছে পেন্সিলের দাগের মতো
প্রজাপতির পাখা থেকে খসে যাচ্ছে রঙ— বিব্রত হচ্ছে রঙধনু
আর মুঠো মুঠো শুষ্ক কান্না বাষ্প হয়ে যাচ্ছে মুগ্ধ উল্লাসে;

নিজেকে কৃষ্ণ ভেবে কালো ক’রে ফেলেছি মন
তোমার দুশ্চিন্তায় হয়ে পড়েছি সন্দেহপ্রবণ।

কার পেয়ালায় রেখেছো চুমুক

একপাল মেঘ চরাচ্ছে রাখাল
মেঘেরা বাতাস খাচ্ছে
বাতাস ঢুকে যাচ্ছে মেঘেদের পেটে

রাখালের বাঁশি তোলে কামজাগানো সুর
তার রিংটোনে বেজে ওঠে কার শীৎকার?
  মনে হয় রাধিকার।
তার প্রেমিকার ঠোঁটে পর-পুরুষের ঘ্রাণ

ওগো রাখাল
তুমিও রেখেছো চুমুক কার পেয়ালায়
এই ভর দুপুরে!

দেয়াশলাইটা কার হাতে
পেট্রোলে গোসল সেরে অন্যমনস্ক ছিলাম,
মন বেড়াতে গিয়েছিল রূপসা সেতুর উপর,
অনেক মজা হয়েছিল
ফিরতে চাইছিল না মন,
লাফিয়ে পড়তে চেয়েছিলো নদীর উপর
অনিচ্ছায় যখন ফিরে এলো; ততক্ষণে পুড়ে গেছে দেহ
আগুন নেভানোর বিভ্রান্ত লাল গাড়ি দুটো
কিছু দুদ্ধর্ষ কয়লা নিয়ে ফেরত গেছে ঘরে
ভেবে ভেবে আমি শুধু বোকাবোকা হই

দেয়াশলাইটা কি ছিল তোমার হাতে?

যীশুর স্কুলব্যাগ
ক্রুশবিদ্ধ পাকস্থলি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি যীশু
কাঁধের ব্যাগে মুখস্ত নামতার বাইবেল
মরিয়মের সাথে ঈশ্বরের প্রেম ছিল কি না
তা নিয়ে কোনো দন্দ্ব নেই
দেবতারা মানবীর প্রেমে পড়লে অসুর জন্ম নিতো
আমার কিছু গৃহপালিত অসুর চাই
বাথরুমে অসুর পুষবো
স্কুলব্যাগে বাইবেল, টিফিনবক্সে অসুরের ডিম...
আমার একটা অসুর দরকার।

তোমার প্রেমগাছ
জবানবন্দীতে বলে যাব ধানশালিকের নাম
এরপর তুলে নিয়ে বিষের বোতল
তোমার নামে চুমুক দেব পাখি

বীজটুকু নাওনি খুলে সেই আফসোস
তোমাকে পান করবেনা আপাতত

তোমার প্রেমগাছ মমি হবে তোমার বাগানে।

আমার দুয়ারে এ কার হৃদয়

দুয়ারে কিসের ঘ্রাণ পাওয়া যায়
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অনুভূতিরা বলছে না,
আমাকে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে
দু’টি নিদ্রামাতাল চোখ- আমি তাদের বকা দেব না;
দুয়ারে একটা খাম কি পড়ে আছে
রেখে গেছে কোনও ঘাড়ত্যাড়া ডাকপিয়ন?
অদৃশ্য আদর বুকে নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখি
আমি শুধু ভেবেই আকুল
ভুল ক’রে কে আবারও করলো ভুল
দুয়ারে ফেলে গেল চশমাহীন হৃদয়।
 
পচা দিনটা

আজ আমার জন্মদিন;
মেঘেরা বেড়াতে আসবে আজ
গন্ধরাজের গন্ধ খুলে আনবে শ্রাবনীর চুল থেকে
একটা খামহীন প্রেমের চিঠি আসবে বাতাসে পাখা মেলে
পা টিপেটিপে নিঃশব্দে ছোট্ট ফোনে ঢুকবে একটা আদুরে বার্তা
যেন অন্যকারো দীর্ঘশ্বাস জন্ম নিলো অদৃশ্য অন্যএক সেলুলার বুকে
ব্যস্ত বাতাসেরা আজ মেঘেদের পিঠে নিয়ে দৌড়োবে, ক্যাটওয়াক করবে
                   রেস করবে- ম্যারাথন রেস...

আজ আমার মনখারাপের দিন, শঙ্কার দিন
            গতকাল ছিলো দুখুমিয়ার;
যাদুকরকে বলবো, ‘হে কপারফিল্ড, আজ দিনটা ক্যালেন্ডারের বুক থেকে
চিরতরে ভ্যানিশ ক’রে দাও, নক্ষত্রের মতো ছুঁড়ে ফেলে দাও
অনন্ত মহাশূন্যেও যেন তাকে খুঁজে না পায় ঈশ্বরও’

আজও একটা ফুটো হবে হৃদয়ে- বাইশফুটো হৃদয় নিয়ে
অপেক্ষা করবো তেইশতম বর্ষের...
আমার মাহমুদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেব
‘ভেবোনা বাছা, মরে যাওয়ার অপেক্ষাইতো মজা’...
একটা চেনা চুমুর জন্য থরোথরো কাঁপছে শরীর...

আজ দিনটা বড় আগলি, অন্যদিনের চে’ অনেক পচা।
 
কয়েকশ লিটার হেমলক
ভয়ানক আঁধারে প্লাবিত হয়েছে হৃদয়ের বাতিঘর
কয়েকশ মিলিমিটার অশ্রুপাতের পর শেষ হয়
অনেকগুলো দুঃখভারী দিন
এবার নাহয় হয়ে যাক কয়েক ছটাক স্বপ্ন বিনিময়
   কয়েক পশলা খুচরো বেদনার সাথে
পেট্রোল পাম্পের নিচে মজুত থাকুক
কয়েকশ লিটার হেমলক- ভবিষ্যতের তরে।
 

বয়ঃসন্ধি, বাংলাদেশী কবিতা

কবিতার মোড় ঘুড়ে গেছে
জাতীয়তা ছেড়ে আন্তর্জাতিক
কুমারী থেকে গর্ভবতী
পুঁজিবাদী এবং শান্তিবাদী।
কবিতার আঁচল সরে গেছে
ঘর ছেড়ে চলে গেছে খাম্বায়-পোস্টারে।
একদিন স্তনে এঁকে নিয়ে ঈগলের ছাপ
কবিতাও হয়ে যাবে মার্কিন ঝালমুড়ি।
 
পরীর মেয়ে
পরীর মেয়ে প্রাণ খুলে গাও গান
শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রেখো গোপন অভিমান,
রূপসাগরে ডেকেছে আজ বান
পরীর মেয়ের আঁচল জুড়ে দস্যি মেঘের ঘ্রাণ,
পরীর মেয়ের বাসতে ভালো মানা
ভালোবাসার সংজ্ঞা মেয়ের হয়নি আজো জানা,
পরীর মেয়ে প্রেম মেখে নাও চোখে
তোমার প্রেমে একটি মানুষ নীল হয়ে রয় শোকে।


মন্তব্যসমূহ

  1. উত্তরগুলি
    1. অন্নেক ধন্যবাদ ফুয়াদ। অনুপ্রাণিত হলাম।

      মুছুন
  2. বাজারজাত হয়ে গেছি
    হৃদয়ে লেগে গেছে কোম্পানির ট্যাগ
    আমি এখন মাল্টিন্যাশনাল ব্যাগ।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন